ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা

ভৈরবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ জন এবং তারা দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছিলেন।


১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন ভৈরবের তৎকালীন যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে গোপনে আলোচনা করে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী ১৫ আগস্ট তারিখে অতি গোপনে হাজি আসমত কলেজের নিউ হোস্টেলে মিলাদ, দোয়া ও কুরআন খতমের আয়োজন করেন তারা।


এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্য ১০/১২ জন মৌলভি উপস্থিত হয়ে কুরআন খতম শুরু করেন। একজন একজন করে আ. লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ২২ জন নেতাকর্মী বিকাল ৪টার মধ্য কলেজের নিউ হোস্টেলে উপস্থিত হন। এ সময় হঠাৎ করে দেখা গেল- প্রায় ৩০/৪০ জন পুলিশ নিউ হোস্টেলটি ঘেরাও করে দুতলায় উঠেছেন। এরপর পুলিশ রুমে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে রাইফেলের বাট দিয়ে প্রথমে ফখরুল আলম আক্কাছকে আঘাত করতে শুরু করে। আর লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল সবাইকে।


পুলিশ বলছিল, কুত্তার বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদের আয়োজন করেছিস, এখন জেলে যেতে হবে।


তারপর মৌলভিদেরসহ ২২ জনকে থানায় নিয়ে হাজতে রাখা হয়। তবে ভৈরব থানা থেকে মৌলভিদেরকে মুচলেকা রেখে এদিনই ছাড়া হয় তাদের। পরদিন থানা হাজতে থেকে তারা জানতে পারে তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ মামলা দিয়ে তৎকালীন মহকুমা আদালতে চালান দেওয়া হচ্ছে। এরপর গ্রেফতারকৃত ২২ জনের কোমরে রশি বেঁধে চালান করা হলো আদালতে। পরে বিচারকের সামনে তারা জামিন চাইলে বিচারক তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর তারা দীর্ঘ কয়েকমাস কারাভোগের পর জেল থেকে ছাড়া পায়।


সেদিন যারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা হলেন- ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, জজ মিয়া, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মাহাবুব আলম, আসাদ মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আতাউর রহমান, ফজলুর রহমান, আসাদুল হক শিশু, আজমল ভূঁইয়া, শাহজালাল হোসেন, সুবল চন্দ্র কর, দীলিপ চন্দ্র সাহা, দীজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, রসরাজ সাহা, আবদুল হামিদ, ইদ্রিস মিয়া ও মাহবুবুর রহমান।


সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, আমরা সেদিন দুঃসাহসিকতার সাথে মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করেছিলাম। এদেশে কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়েছিল কি-না আমার জানা নেই। আমরা ভাবতেও পারেনি মিলাদ দোওয়ার জন্য গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হবে। তৎকালীন সামরিক সরকারের নির্দেশেই আমরা ২২ জন গ্রেফতার হয়েছিলাম।


এ দিকে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা ছিল যাদের অপরাধ। কিন্তু এখন তাদের খবর কেউ রাখে না। এমনকি ১৫ আগস্ট স্থানীয় আ. লীগ ও প্রশাসনের অনুষ্ঠানগুলোতে তাদেরকে দাওয়াত দেয় না।

ads

Our Facebook Page